২৫০ বছরের ইতিহাস নিয়ে আমাদের বাওয়ালী

বাংলার বৃন্দাবন বাওয়ালী

২৫০ বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মন্দির নগরী বাওয়ালী । তার রাজকীয় রাজবাড়ী , অসংখ মন্দির এবং বাংলার সৌন্দর্য যেকোনো মানুষের মনকে নিয়ে যাবে এক রূপকথার যুগে।

বাওয়ালীর বিষয়ে আরও অনেক তথ্য

বাওয়ালীর ইতিহাস

বাংলার জমিদার ও জমিদারির এক রঙিন এবং বর্ণময় অধ্যায় থেকে আপনাদের জন্যে তুলে ধরছি বাওয়ালীর ইতিহাস

বাওয়ালীর ফেসবুক পেজ

নতুন কিছু জানতে চাইলে আমাদের বাওয়ালীর ইতিবৃত্ত ফেসবুক পেজ লাইক এবং ফলো করতে ভুলবেন না একদম

বাওয়ালীর ইউটিউব চ্যানেল

বাওয়ালীর আঞ্চলিক খবরের সমাহার এর পাশাপাশি এলাকার সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্য ও এলাকার সম্বন্ধে পরিচিতি প্রদান করা হয়ে এই চ্যানেলে

বাংলার বৃন্দাবন বাওয়ালী

কলকাতার খুব কাছেই  মন্দিরে ঘেরা সুসজ্জিত একটি গ্রাম বাওয়ালী। ইতিহাসের গন্ধ মাখা সাহিত্যের রূপকথা আঁকা বাংলার চালচিত্রের সৌন্দর্যকে প্রাণ ভরে দেখতে হলে অবশ্যই আসতে হবে মন্দির নগরী বাওয়ালীতে। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন গ্রাম এই বাওয়ালী।

ষোলশ শতকের প্রথমার্ধে মাহিষ্যকুল জমিদারেরা মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে জাগির লাভ করে বাওয়ালিকে তাদের মূল কার্যকেন্দ্রে পরিণত করেন।মাহিষ্য জমিদারদের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল তৎকালীন বড় বড় ভূস্বামী জমিদারদের থেকেও অধিক । ইংরেজ সরকার রাজ উপাধী দিতে চাইলেও নিতে অস্বীকার করেন মাহিষ্য জমিদারেরা ।বহু ভুসম্পত্তির অধিকারী হিসাবে মাহিষ্য জমিদারেরা মণ্ডল হিসাবে পরিচয় পেয়ে ছিল।

এই মণ্ডল জমিদারেরা প্রথমে রায় পদবী হিসাবে পরিচিত ছিল বাসুদেব রায় হলেন মণ্ডল পরিবারের আদিপুরুষ বাসুদেব রায়ের পৌত্র শোভারাম তাঁর পৌত্র রাজারাম ছিলেন হিজলিরাজ সরকারের প্রধান সেনাপতি। তাঁর বিচার বুদ্ধি পরিচালনার ক্ষমতার দক্ষতা দেখে তাকে পঞ্চাশটি গ্রামের দায়িত্ব দেয়। মণ্ডল ভূস্বামী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই গ্রামের পরিধী ছিল বহুদূর ব্যাপ্তি।  টালিগঞ্জতারাতলা, বজবজবেহালা, আমতলাবাখরাহা্ট, বিরলাপুর এবং আছিপুর সবই ছিল মাহিষ্য জমিদারদের।  সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতি ব্যবসা বানিজ্য সব দিক দিয়েই উন্নত ছিল এই জমিদারেরা তার সাথে শিল্পকলা নান্দনিকতার প্রকাশ পেত তাদের রুচিবোধ আভিজাত্যের মধ্যে দিয়ে।  প্রথমদিকে শৈব ছিলেন মাহিষ্যরা প্রধান উপাশ্য দেবতা হিসেবে শিব ছিল কিন্তু  পরবর্তী কালে বৈষ্ণব ভাব ধারায় ভাবিত হয়ে রাধাকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে মন্দির তৈরি করতে শুরু করে। সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির গুলি হল শিবের মন্দির তার পরবর্তী মন্দির গুলি হল সব রাধাকৃষ্ণের মন্দির

 রাধাকান্ত জীউ মন্দির (১৭৭১), গোপীনাথ জীউ মন্দির (১৭৯৪),‌ শ্যামসুন্দর জীউ মন্দির (১৮৬৩), রাধাবল্লভ জীউ মন্দির (১৮১৩), শ্রীধর জীউ মন্দির (১৮৫৯) মদনমোহন জীউ মন্দির,  লক্ষ্মীজনার্দ্দন মন্দিরজগন্নাথবলরাম মন্দির,  রাসবিহারী গোবিন্দজী মন্দির, গোপালজী মন্দির, রাজ রাজরাজেশ্বর মন্দির(শিব মন্দির), শ্রীশ্রী চণ্ডীমাতা মন্দির  রাসমঞ্চদোলমঞ্চতুলসীমঞ্চ ও নাটমন্দির আছে বাওয়ালী থেকে কিছুটা দূরে বাখরাহাট কাচবাগানে আছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সর্ববৃহৎ আটচালার মন্দির দ্বিতীয়রাধাবল্লভ মন্দির বাওয়ালীর গোপীনাথ জীউ মন্দিরটি ৯টি চূড়ার মন্দির তাই এর আরেকনাম নবরত্ন মন্দির মন্দিরটির কেন্দ্রীয়  বৃহত্তম পীড়ারীতির ও আটটি রত্ন ত্রিরথ রেখাশৈলী হিসাবে তৈরি ১৭৯৬ খ্রীষ্টাব্দে রামনাথ মণ্ডল টালিগঞ্জে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মধ্যে সর্বচ্চ নবরত্ন মন্দির তৈরি করেন কথিত আছে স্বয়ং রানী রাসমণি বাওয়লীতে এসে  গোপীনাথজীর দর্শন করে ছিলেন এবং পরবর্তীকালে দক্ষিণেশ্বরে বাওয়ালির নবরত্ন মন্দিরের অনুরূপ নবরত্ন মন্দির তৈরি করেন বর্তমানে যে মন্দির মা ভবতারিণীর মন্দির হিসাবে  পরিচিত মন্দিরের সাথে সাথে শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্যের নির্দশন পাওয়া যায়  জলটুঙ্গীজলমহলহাওয়াখানাচিড়িয়াখানাকৃত্রিম উদ্যানবসতবাটি এবং পরীদের নগ্ন মূর্তি  বাওয়লীর রথযাত্রা ছিল বাংলার মধ্যে অন্যতম ১২১৬ সালে মানিকচন্দ্র মণ্ডল ১৩ চুড়ার রথ তৈরি করেন  লক্ষ্মীজনার্দ্দন ঠাকুরের পুষ্পক রথ  সময়ের সাথে সাথে সব ম্রিয়মান হয়ে গেছে গ্রামের মধ্যে শতাব্দী পাড় হওয়া বাওয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়  তাদের অন্যতম কীর্তি স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি মাহিষ্য জমিদারেরা সরাসরি না যুক্ত থাকলেও সহযোগী হিসেবে সবর্দা পাশে ছিলেন স্বাধীনতা বিপ্লবীদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনেক গোপন বৈঠক হয়েছে মাহিষ্য জমিদারদের কাছারি বাড়ির অন্দরমহলে বাওয়ালীর প্রতিটি উৎসব বা মেলা রাধাকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণব কেন্দ্রিক গোস্ট মেলা, রাসমেলা, ঝুলন পূর্ণিমা, রথ যাত্রা, ফাগুন মাসে ফুলদোল উৎসব  বাওয়ালি মণ্ডল জমিদারদের মন্দির স্থাপত্য টালিগঞ্জে লক্ষ্য করা যায় টালিগঞ্জে মণ্ডল টেম্পল লেনে বড় রাস মন্দিরছোট রাস মন্দির, দ্বাদশ শিব মন্দির, রাধাকান্ত মন্দির এবং আদি গঙ্গার ধারে গৃহ দেবতার নামে গঙ্গাগোবিন্দের ঘাট গোপালজীর ঘাট প্যারিলাল মণ্ডলের তৈরি হরিধাম মন্দির

বর্তমানে বাওয়ালী জমিদারদের কাছারি বাড়িটি বিলাসবহুল রিসর্টে পরিণত হয়েছে। বাওয়ালী রাজবাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছে। সিনেমার শুটিং থেকে শুরু করে দেশ বিদেশ থেকে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের মনোরঞ্জনের জায়গা হিসাবে বেছেনিচ্ছে বাওায়ালী রাজবাড়িকে। বাওয়ালী রাজবাড়ি ছাড়াও বাওয়ালিতে থাকার জন্যে বাঙ্গালীয়ানা রেস্তরাঁ আছে বাওয়ালী থেকে এক্টু দূরে বাওয়ালী ফার্ম হাউস যেখানে আপনি খুব কম  খরচে থাকতে পারবেন। প্রতিটি ঘরের নাম গুলো অদ্ভত সুন্দ্র কনটা মেঘে ঢাকা তারা কনোটা  গাছবাড়ি সাহিত্যের নির্যাস মাখা ঘর গুলি সাহিত্যপ্রেমী মানুষ দের মন ছুঁয়ে যাবে। নদীর ধারে সময় কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন রায়পুর গঙ্গা এখানে বসেই বাংলার অন্যতম সাহিত্যিক আব্দুল জব্বার লিখেছিলেন ইলিস মাড়ির চড় । বহু বর্ষ পূর্বে গঙ্গা সাগর মেলার সময় ভারতবর্ষ থকে সাধু সন্ন্যাসীরা গঙ্গা শান করার আগে বাওয়ালী মন্দির দর্শন করে যেতেন  তাই একে গুপ্ত বৃন্দাবন বলা হত। কথিত আছে স্বয়ং মহাপ্রভুর আগমনের পর নদীয়ার বসন্তপুর থেকে বাওয়ালীর জমিদাররা এসে নব বৃন্দাবনের সূচনা করেন।বর্তমানে  ভগ্নপায় মন্দিরগুলি নতুন করে নবনির্মিত হচ্ছে। মন্দির কমিটি এবং সাধারন গ্রামের মানুষদের যৌথ্য উদ্দ্যগে নবরূপে সেজে উঠছে মন্দির নগরী বাওয়ালী। বাওয়ালীর মন্দির সংস্কার কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর  পুনরায় বাওয়ালী নব বৃন্দাবন হিসাবে পরিচিত হবে বাংলার  কাছে,   বাওয়ালীতে এসে যদি কোন অসুবিধা হয় বা ট্যুরিস্ট গাইড হিসাবে যদি কাউকে রাখতে চান বাওয়ালী ইতিবৃত্তের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করেনেবেন।
সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্প ইতিহাস আধ্যাত্মিকতা মেলা পার্বন চলচ্চিত্র একত্রিত হয়ে বাওয়ালী এক অন্যতম সংস্কৃতির তীর্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসুত্রঃ বাওয়ালীর শেষ জমিদার অরুণ কুমার মণ্ডল এবং আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র বাওয়ালীর ইতিবৃত্ত 

কলমে- অমিত দাস (প্রেমানন্দ) || ছবি – অগ্নিদেব মন্ডল, অমিত দাস (প্রেমানন্দ) ও মৃগাঙ্ক করণ

Some of Our

Beautiful Pictures

Contact Us

For any Bawali related inquiries please email

heritagevillagebawali2017@gmail.com

Share this page -->

[Sassy_Social_Share]
error: No No No!! Cannot right click