হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে...
চিরকালের চেনা কোন মানুষকে জানার বা চেনার অবকাশ আমরা সারা জীবন ধরে পাইনা।তাঁকে চেনা জানার মধ্যেকার ব্যবধান টুকু ঘোচেনা কোনোকালেই। কখনো কখনো মনের কোণে, অন্তরে-বাহিরে তিনি চিনেও অচেনা, জেনেও অজানা থেকে যান। ঠিক চিনেছি মনে করলেও, কিন্তু সেটা পরিচয় থেকে যায় সম্পূর্ণ জানা হয়ে ওঠে না ।চিরকালের সেই চেনা কবি কাজী নজরুল এমন একজন যাঁর সাথে পরিচয় সেই কোন ছেলেবেলায়। তাঁর কাছে “খুকি” হয়ে থাকায় ছিল সবচেয়ে সহজ। কঠিন হলো তাঁকে খুঁজতে যাওয়া তাঁর মধ্যে। কারণ, বাঙালির মধ্যে কাব্য বা সাহিত্যে তিনি এক অন্যতম বর্ণময় স্রষ্টা।সৃষ্টির বৈচিত্রে, দুর্দমনীয় প্রাবল্যে ও অন্তিমে বাঁধনহারা নীরবতায় তিনি নিজেই যেন এক বিকীর্ণ ইতিহাস। বাঙালির জীবনে অবিভাজ্য নক্ষত্র, ভাগ না হওয়া নজরুল সমগ্র দেশবাসীর কাছে একান্ত কাছের মানুষ।
কাজী নজরুল কিন্তু বেশ কয়েকবার বজবজে আসেন। প্রথম ১৯২৫ সালে শ্রমিক আন্দোলনের সভাতে। সে বছর ‘লাঙল ‘ অর্থাৎ শ্রমিক আন্দোলনের মুখপত্র প্রকাশিত হয়। সঙ্গে থাকতেন ঠাকুরবাড়ির সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রমিক সভায় কবি গান গাইতেন , আবৃত্তি করতেন।১৯২৮ সালে বজবজের এরকমই একটি শ্রমিক সবাই কবি “ফরিয়াদ” কবিতাটি আবৃত্তি করেন।এই সভাতেই “ওড়াও ওড়াও লাল নিশান”(রক্ত পতাকার গান) ও” জাগো অনশন বন্দী” (দ্য ইন্টারন্যাশনাল) গেয়েছিলেন।১৯৪১ সালে বিশ্বকবির প্রয়ানের পর বজবজের টাউনহলের স্মরণসভায় কবি “রবিহারা” কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
জীবিত অবস্থায় ধর্মান্ধরা নানাভাবে কবির বিরুদ্ধাচারণ করেছেন।অসংখ্যবার কষ্টের কাঁটা বিঁধেছে তাঁর পায়ে, রক্তাক্ত হয়েছে দেহ, ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে হৃদয়, ঋণ শোধ না করতে পারা, মামলা, স্ত্রীর অসুস্থতা, গ্রন্থের রয়্যালটি বন্ধক রাখা ইত্যাদি নানা অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা কবি ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে ফেলেছিল। অপ্রতিরোধ্য আবেগ ছিল কবির স্বভাবে ও চলনে।কিন্তু এইসব দুর্যোগ প্রাণবন্ত এই মানুষটির জীবনে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। অসংখ্যবার বাসস্থান বদলও নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে থাকা যেন কোন অভিশাপ বহন করে চলছিল। অসুস্থ সস্ত্রীক কবি তখন ভবঘুরে ।সত্যি যেন “পথহারা পাখি”।