আমাদের
মহেশতলা - সন্তোষপুর
আমাদের সন্তোষপুর
“আমার” বা “আমাদের” বলতে থাকে একটা প্যারোকিয়েলিজম, তবুও তাকে প্রশ্রয় দিতে কুন্ঠিত নই আমরা, নিন্দুকেরা যে যাই বলুক। “আমার মা”, “আমার ভাষা”,”আমার দেশ”,”আমাদের অঞ্চল”-এর মধ্যে আছে এক গভীর প্রীতি ও ভালবাসার পরশ। একটি মজার কথা কি জানেন ? কলকাতার উপকণ্ঠে আরও একটা সন্তোষপুর আছে, সেটা যাদবপুর অঞ্চলে, কিন্তু সেখানে নেই সন্তোষপুর রেল স্টেশন। সন্তোষপুর বজবজ এলাকা এক সুপ্রাচীন সম্বৃদ্ধিশালী অঞ্চল। ইতিহাসে তার সন্ধান পাওয়া যায়। আমরা যারা এই অঞ্চলের মানুষ,আমাদের কাছে এ অঞ্চল গর্বের , ঐতিহ্যের। আসুন সবাই মিলে এই সন্তোষপুর বজবজ অঞ্চল নিয়ে চর্চা করি। অনেকের কাছেই সঞ্চিত আছে অনেক অমূল্য রতন, শেয়ার করুন এই পেজে,সেই আবেদন জানিয়ে শেষ করি আমার কথা।আগামীতে কিছু লিখার প্রয়াস থাকলো আমাদের অঞ্চল নিয়ে।
প্রায় ৪৩ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বিশিষ্ট আয়তনে পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম পুরসভা হলো আমাদের মহেশতলা পুরসভা।
২১টি পূর্বতন গ্রামপঞ্চায়াতের ৪০ টি সম্পুর্ন ও আংশিক মৌজা নিয়ে মহেশতলা পুরসভার জন্ম হয় ২১শে ডিসেম্বর, ১৯৯৩ সালে। প্রথম অ্যাডহক বোর্ডের স্থায়িত্ব ছিল ১৫৬ দিন। ১৯৯৪ সালের ১৫ই মে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং ২৭শে মে প্রথম নির্বাচিত বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণ করে।প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ঐতিহাসিক বজবজ রোড ও বজবজ -শিয়ালদহ রেললাইন পুরসভার মানচিত্রকে প্রায় আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত করে রেখেছে।
এখানে আছে ৩টি রেলস্টেশন:সন্থোষপুর, আকড়া ও নঙ্গী। উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বাংশ কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অঞ্চল সন্নিহিত। পশ্চিমে শতবর্ষ প্রাচীন বজবজ পুরসভা ও সংলগ্ন চিংড়িপোতা ও উত্তর রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাধীন অঞ্চল। দক্ষিন-পূর্বে আশুতি অঞ্চল ও আংশিক বেহালা করপোরেশন পুরসভাকে গঙ্গারামপুর রোড দিয়ে বিভক্ত করে রেখেছে।
জনসংখ্যার এক বিশাল অংশই শ্রমজীবী ও গরীব মানুষ।আছে ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এলাকার বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ওস্তাগার ( দর্জি) সম্প্রদায়। ইট শিল্পে আকড়ার নাম পশ্চিমবঙ্গে সুপরিচিত।
প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলিম ধর্মাবলম্বী, অল্প হলেও এখানে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষ, সামান্য সংখ্যক খৃষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত । সকলেই সকলের সাথে সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব নিয়ে একত্রে বসবাস করেন। গনআন্দোলন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে মহেশতলা অঞ্চলের খ্যাতি বিদ্যমান। শিক্ষা বিস্তাতের উদ্যেশ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ( সম্ভবত ১৮১০_১৫ সালে) শ্রী যোগেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকঘরের কাছে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরবর্তী কালে স্থানান্তরিত হয় ১৮৫৮ সালে মহেশতলার ব্যানার্জি হাটের কাছে। মহেশতলা হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
দ্বাদশ শতাব্দীর পর থেকে নদী অববাহিকার ধার জুড়ে সুফি দরবেশ মরমী সাধকরা বাংলায় এসেছিলেন। তারই উত্তরসুরী হিসেবে হাজী আব্দুস সাত্তার ( নবাব সাহেব নামে পরিচিত) ১৮৮৫ সালে আকড়ায় একটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলা,আরবী এবং ফার্সী সাহিত্যের চর্চা কেন্দ্র হিসেবে যা বর্তমানে মহেশতলা পুরসভার অন্তর্গত আকড়া অঞ্চলে স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত।
সংস্কৃতিমনস্ক ও ক্রীরানুরাগী মানুষ, শিক্ষা বিঞ্জানে অগ্রণী ও সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য সংকল্প বদ্ধ এক বিপুলসংখ্যক মানুষ এই অঞ্চলকে সচল রেখে দিয়েছে তার নিজস্বতা দিয়ে। দক্ষিনবঙ্গের এই বিস্তৃত অঞ্চলটি ছিল একদা সুন্দরবনের অংশ বিশেষ জঙ্গল ও জলাভূমিতে পূর্ণ। উত্তরে সরস্বতী নদীর ( অধুনা হুগলি) অবস্থিতি ও বজবজ রেললাইন স্থাপন এই অঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রকে তরান্বিত করেছিল।
লাগোয়া বজবজ অঞ্চলেই অবস্থিত ঐতিহাসিক কামাগাটামারুর বিষাদ এক স্মৃতি _ প্রথম বিশ্ব মহাযুদ্ধের সময়ে যেখানে নিরস্ত্র শিখ স্বাধীনতাকামীদের বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী হত্যা করেছিল। স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্মমহাসভা থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে এই অঞ্চলেরই অদূরে বজবজে এসেছিলেন যা আমাদের গর্বিত করে তোলে।
কলকাতার রাজভবন থেকে মাত্র চোদ্দ কিলোমিটার দূরে এই অঞ্চল । ঐতিহাসিক বজবজ-শিহালদহ রেললাইন আর বজবজ রোড যাতায়াতের সেতুবন্ধন। অদূরে নদীবাহিত জলরাশি আর বাঘ-কুমীরের আবাসস্থল। আছে মৎস্য চাষীদের দৈনিক সংগ্রামী জীবন।…. প্রাচীন পরিব্রাজকদের নদীপথে এই অঞ্চল দিয়েই আগমন, সেই জব চার্নকের সুতানুটি যাত্রা তাও ওই গঙ্গা দিয়ে,তাই নাকি ! হারিয়ে যাওয়া বিদ্যাধরী সরস্বতী আর পূর্ব কলকাতার বিশাল জলাশয় মাছের ভেড়ি যা বুজে আজকের আধুনিক লবন হ্রদ বা নিউটউনের জন্ম, কত না স্মৃতি বিজড়িত আমাদের অঞ্চল। লিখুন এই অঞ্চল নিয়ে।বয়সের ভাড়ে আমি ন্যুব্জ, চেয়ে থাকলাম আপনার লেখার জন্য।প্রসঙ্গত বলি সাহিত্যিক বিমল মিত্রের ” কড়ি দিয়ে কিনলাম-“তে কলকাতা দক্ষিন স্টেশনের নাম ছিল বেলিয়াঘাটা স্টেশন আর উল্লেখ আছে এ অঞ্চলের ।
About the writer
“আমি এক অস্টআশি বছরের চির তরুন যুবক। সন্তোষপুরের প্রেমে পড়েছিলাম আজ থেকে ৪৩ বছর আগে । থাকতাম ডাকতার কর্মীদের সরকারি আবাসনে মানিকতলা, কলকাতায়। তখন ছিল বাসস্থানের সমস্যা। হঠাৎ একদিন কোনো এক বন্ধুর (সহকর্মী) পাল্লায় পড়ে বেড়াতে এসেছিলাম এই অঞ্চলে।তখন সন্তোষপুর অঞ্চল ছিল গ্রাম। বজবজ–শিয়ালদহ রেল লাইন ছিল একমুখি, যাকে বলে, সিঙ্গুল লাইন আর কি! স্টেশনে নেমে হেঁটেই আসি রবীন্দ্রনগর হাই স্কুল অবধি। ( তখন রিক্সাও চলতোনা। সবাই ছিল পদাতিক) , তা যাক গে , সেখান থেকে দত্তবাগানের মাখখান দিয়ে বাঁশবাগান পেরিয়ে শেষে এসে পৌঁছলাম নির্মিয়মান পশ্চিম বঙ্গ সরকারের আবাসনে। বাহারি নাম “দক্ষিণী হাউসিং এস্টেট” । অদূরে গঙ্গা প্রশস্ত হয়ে সাগরাভিমুখী,পল্লীগ্রামের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে যাই। তারপরই ছোট্ট একটা বাড়ি কিনে এখানে স্থায়ী হয়ে গেলাম।…
আজ এত বছর পর আমাদের অঞ্চল আর গ্রাম নেই।এখন আমরা মহেশতলা মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে শহরবাসী।…. সবাইকে শুভেচ্ছা আর ইংরেজি নববর্ষের সূচনা লগ্নে জানাই “Happy new year”
সবাই ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে।”
Image and Content Source: আমাদের Santoshpur(Budge Budge) Facebook Group