amader BIRLA PUR
Birlapur turns 100
It isn’t every day day somebody turns a century old. We are so glad Birlapur is still one of our youngest neighbourhoods. Let us tell you a short history about our Birthday boy!
Happy 100th birthday to Birlapur!
শত বর্ষে বিড়লাপুর
কাকভোর , জনশূন্য বাজার, বন্ধ দোকান পাসড়ি, ভোরের আজান আর হিন্দি ভজন। না মশাই আপনি স্বপনে নন আপনি বিড়লা পুরে আছেন।হাজার 1919 সাল থেকে এই জনপদ শ্যামগঞ্জ-এর খোলস ছেড়ে ধীরে ধীরে বিড়লাপুর-এ পরিণত হয়েছে। এখন 2019 সাল।শতবর্ষের শহরতলীতে পা রাখলেই বাধ্য ছেলের মতো অধিকার হাতছানিতে মন্ত্র মুগ্ধ হতে হয়। নস্টালজিয়ার নাগপাশ নাছোড়বান্দা। নেশাতুরের মত ইতিহাসের কাছে মাথানত করতে হয়। চলো ফিরে যাই, শহরতলীর শতবর্ষের গোড়াপত্তনে। "টাটা-আম্বানি" এই শব্দবন্ধ তৈরি হবার আগে "টাটা-বিড়লা" নামের আরেক শব্দ বন্ধ ছিল, জন্মগত বড়লোক চিহ্নিত করতে এই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হতো। সেই বিড়লার কর্ণধার জি ডি বিড়লা 1919 এ ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের চোখে চোখ রেখে গঙ্গার গা ঘেঁষে বানিয়েছিলেন চটকল। বলতে গেলে, সোনালী ফসলে প্রথম স্বদেশী ছোঁয়া। সেই চটকল কি গিরি গোড়াপত্তন বিড়লাপুরের। অবশ্য বিড়লাপুরের প্রকৃত প্রগতির পুরোধা ছিলেন জিডি বিড়লার ভাইপো এমপি বিড়লা। তারই হাত ধরে চটকলের পাশাপাশি অন্যান্য কারখানাগুলো শুরু হয়েছিল। কৃষিপ্রধান জনপথ ধীরে ধীরে শিল্পনির্ভর হতে শুরু করেছিল। গড়ে উঠেছিল ঘনবসতি, আসতে শুরু করল বাংলার বাইরের মানুষ জনও। প্রায় পাঁচ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিরলাপুর এর অবস্থান। 2011 সেন্সাস অনুযায়ী 22078 জনের ব্যক্তির বাস এই বিড়লাপুরে। বেশিরভাগই চটকল শ্রমিক। যদিও কলকাতা থেকে 30 কিমি দূরে অবস্থিত, 77A বাস যোগে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত।জীবনের সঙ্গে নাকি তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের সঙ্গে পরম বন্ধুত্ব ছিল। রাজনীতিক এবং শিল্পপতিদের বন্ধুত্ব কোন ফেনোমেনা নয়, তা নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা। বর্তমানকালেও এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। শোনা যায় বজ বজ থেকে বিড়লাপুর পর্যন্ত রেলপথ পাতার কথাও হয়েছিল, কিন্তু তা জিডি সাহেবের জন্যই বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বিড়লাদের প্রস্তাব ছিল যে, তাদের নিজের খরচাতেই রেলপথ পাতা হবে, না হলে হবে না। তিনি নাকি চান না বিড়লা পুরে কোন ভেজাল মিশুক। আজও বিড়লাদের অফিসে মাছ মাংস পেঁয়াজ রসুন নিষিদ্ধ। বিড়লাপুর ছিল প্রথম থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোম্পানি নিজে হাতে এই শহরতলীতে লালিত করেছে। দূর থেকে হাসপাতালে চূড়া দেখলেই বোঝা যায় কতটা গ্ল্যামারাস ছিল বিড়লাপুর। আর কি নেই এখানে!বারোমাসি আম গাছ থেকে শুরু করে গোটা প্রেক্ষাগৃহ, বিলিয়ার্ড টেবিল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, লাইব্রেরী, ফার্ম হাউস... হিন্দি এবং বাংলা সেকশন মিলিয়ে এতদঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্কুল। যেখানে পুরো দেশে মিড ডে মিলের ধারণা পঁচিশ বছর পার করে নি সেখানে বিড়লা দের স্কুলে প্রায়ই বিগত 60 বছর আগে থেকে শিশুদের কোম্পানির নিজস্ব খরচায় টিফিন দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে তা কখনোই ভাত নয়, দেওয়া হতো ডিম,কলা, পাউরুটি ,লাড্ডু। বিড়লাপুর এর অন্যতম সেরা আকর্ষণ হলো এর বাজার। বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে শেষ যাত্রার কাফন সব পাওয়া যায় এখানে। তবে 1953 সালের আগে বাজারের অবস্থা এরকম ছিল না। ধুলো এবং কাদাতে নাজেহালহতে হতো সাধারণ মানুষকে।শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে শেষে কোম্পানি পুরো বাজারে ইট-পাতার বন্দোবস্ত করেছিল।
এগুলি সবই অতীতের কথা, আর মানুষের অতীত সর্বদাই গৌরবময়। আধুনিক পলিথিন এর সাথে অসম প্রতিযোগিতায় অভিজাত পাটের সম্মানহানি হয়েছে। তার উপর পারিবারিক কোন্দল, রাজনীতির চাপ, লবিবাজদের খপ্পরে পড়ে একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে লাগল। ধীরে ধীরে শ্রীহীন হতে লাগলো বিড়লাপুর। যৌবনের মহীরুহ জীবনী শক্তির অভাবে যেমন বর্ণহীন হয়ে পড়ে, তেমনি অর্থাভাবে বিড়লা পুর আজ পঙ্গু। কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে মনে হয় যেন তা এই শহরতলীর জীবন্ত লাশের চিতা থেকে উত্থিত।প্রতি শনিবার বাজারের হাট দেখলে মনে হয় বিরলাপুর প্রতি সপ্তাহে পুনর্জন্ম লাভের ব্যর্থ চেষ্টা করে। পরদিনই তা মলিন হয়ে যায়। নাটক যাত্রাপালা তো কবেই ইতিহাসে স্থান নিয়েছে। ছোট্টবেলার সিনেমা হলের পাশ দিয়ে গেলে মনে হয় কোলাহল আর হুল্লোড় মন মরা করে বসে থাকে। স্কুল ছুটির পর মাঠে খেলা এখন মোবাইলের ভিতরে প্রবেশ করেছে। যেন যাহোক করে বিড়লাদের শতবর্ষের পরিকল্পিত শহর তার মিশ্র সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্বের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। চেনা মুখগুলোর অনেকেই হারিয়ে গেছে।তবু কিছু স্বাদ আজও শৈশবের স্মৃতির সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে বাধ্য করে। হয়তো জীবনের টনি তুমি পরিযায়ী আজ। শৈশবের কাব্যময় বানান ভুলের সোনালী দিন আর ফিরবেনা জানি। তা সত্ত্বেও কেউ এত একথা অস্বীকার করতে পারবে না বিরলাপুর এর একটা আলাদা স্বাদ আছে।যদি তুমি তোমার জীবনের বরাদ্দ আয়ু কিছুটা এখানে কাটাও তাহলে এক অবশ্যম্ভাবী অবসাদ বীমা তোমাকে ঋণী করবে। বিড়লা পুর শুধুমাত্র শিল্পের শহর নয়, এ শহর অতিপরিচিত রূপকথার শহর, এ শহর মন কেমনের শহর, এ শহর শৈশবের শহর, এ শহর শতবর্ষের এক অমোঘ উল্লাসের শহর।
শহিদুল ইসলাম